রেমিট্যান্স নিয়ে সতর্ক ব্যাংক
হঠাৎ করেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটার টান। ব্যাংক বন্ধ থাকার কারণে গত ৯ মাসের ধারাবাহিক অর্জন জুলাইয়ে ব্যাহত হতে পারে। কারণ গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে প্রতি মাসে দুই বিলিয়ন (২০০ কোটি) ডলারের আশপাশে বা তার চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কিন্তু চলতি জুলাই মাসের ২৭ দিনে ১৫৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর মৌখিকভাবে এক ডজন ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। যারা রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ পায়, এমন ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, রেমিট্যান্স সংগ্রহের জন্য ডলারের দাম বাড়ানোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই।
দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠিয়ে হুন্ডিতে পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন প্রবাসীরা। এতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমার শঙ্কা দেখছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রবাসীরা দু-এক মাস আয় পাঠাতে না পারেন। তবে যাঁরা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠান, তাঁরা হুন্ডিতে পাঠাবেন না। আগামী এক সপ্তাহ বোঝা যাবে রেমিট্যান্স কমবে কি না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের যত সম্পদ, আমাদের সরকারের যত অবকাঠামো, এগুলো কিন্তু আপনাদের রেমিট্যান্সের টাকা, দেশের কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ীর করের টাকায় তৈরি।’ তিনি আরো জানান, যাঁরা রেমিট্যান্স পাঠানোর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন, তাঁরা যদি টানা ছয় মাস রেমিট্যান্স না পাঠান বা বৈধ পথে না পাঠান, তবে আমাদের দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষতি হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯ থেকে ২৪ জুলাই ছয় দিনে দেশে প্রবাস আয় এসেছে সাত কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাস আয় এসেছিল সাত কোটি ৯০ লাখ ডলার। তাতে দেখা যাচ্ছে, মাসের প্রথম ভাগে এক দিনে যে পরিমাণ প্রবাস আয় এসেছিল, সর্বশেষ গত ছয় দিনে এসেছে তার সমপরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যদি কেউ বিদেশ থেকে প্রবাস আয় পাঠিয়ে থাকেন, ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য; কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাস আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তাতে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর জন্য বিদেশে ক্যাম্পেইনসহ যা যা করা দরকার সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার কারণে ওই সময় রেমিট্যান্স আসার গতি কমেছে। তবে যাঁরা দেশকে ভালোবাসেন, তাঁরা অপপ্রচারে কান দেবেন না বলে আমরা আশাবাদী।’
গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘রেমিট্যান্স পাঠানো হয় প্রধানত পরিবারের প্রয়োজনে। ফলে সংঘবদ্ধভাবে অনেক দিনের জন্য মানুষ রেমিট্যান্স পাঠাবে না, কিংবা হুন্ডি করবে তা বাস্তবসম্মত নয়। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো খারাপ হলে জাতিসংঘ যদি তদন্ত করে কোনো ব্যবস্থা নেয়, তখন বিদেশি ঋণ ও অনুদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকও সরে দাঁড়াতে পারে।’