কৃষি ও পরিবেশ

পৃথিবীর ভয়ংকর ও বিচিত্র যেসব স্থান

সাগর, পাহাড়, বন ও আকাশ ঘেরা এই পৃথিবীতে কত কিছুই না রয়েছে। কিছু কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো দেখলে রোমাঞ্চকর, আশ্চর্যজনক ও অদ্ভুত বলে মনে হয়। আবার এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো দেখলে গা শিউরে ওঠে। আজ আমরা পৃথিবীর ভয়ংকর কিছু স্থান সম্পর্কে জানবো।

# খুনি হ্রদ: সুন্দর এই পৃথিবীকে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলার জন্য হ্রদ বা জলাশয়গুলোর বিশাল ভূমিকা রয়েছে। অনেকেই অবকাশ যাপনের জন্য বেছে নেন হ্রদবেষ্টিত কোনো স্থানকে। তবে ক্যামেরুনে রয়েছে এমন একটি হ্রদ যাতে অবকাশ যাপন তো দূরের কথা এর ২৩ মাইলের মধ্যে গেলেই মারা যেতে পারেন। স্থানীয়ভাবে এই হ্রদটিকে বলা হয় ‘Killer Lake’ বাংলায় যার অর্থ দাড়ায় ‘খুনি হ্রদ’। তবে এর আসল নাম ‘নয়োজ’ (NYOS). ১৯৮৬ সালে এই হ্রদ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বুদবুদ বের হওয়া শুরু করে। এই কার্বন-ডাই-অক্সাইড সালফার ও হাইড্রোজেনের সাথে মিশে বায়ুমন্ডলে চলে যায়। সে সময় এই গ্যাসের প্রভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রায় ১,৭০০ মানুষ ও ৩,৫০০ গবাদিপশু মারা যায়। যারা বেচে ছিল তাদেরকেও দির্ঘমেয়াদি কষ্টকর পার্শপ্রতিক্রিয়া যেমন ক্ষত, টিস্যু পোড়া এবং শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা প্রভৃতিতে ভুগতে হয়েছিল। এরপর থেকেই এই হ্রদটির নাম হয়ে যায় ‘খুনি হ্রদ’। এরকমটি হওয়ার কারণ হলো, এটি একটি মৃত আগ্নেয়গিরি জ্বালামুখের পাশে অবস্থিত। এর উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও এটি লাভায় পরিপূর্ণ এবং এর মধ্য থেকেই কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়। পর্বতের এই অংশটি ওক পর্বতমালার অন্তর্গত যা ক্যামেরুনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত।

# শ্যাম্পেন লেক: নাম শুনে মনে করতে পারেন এই লেকে বোধ হয় পানি থেকেই শ্যাম্পেন হয়। আসলে তা নয়। এই লেকের পানি থেকে শ্যাম্পেন না হলেও এই লেকের পানি থেকে কার্বন-ডাই-অ্ক্সাইডের বুদবুদ বের হওয়ার ধরন অনেকটা শ্যাম্পেনের বোতল খোলার পর যে রকম বুদবুদ করে ভিতর থেকে শ্যাম্পেন বেরিয়ে আসে সেরকম। এ কারণে এটিকে শ্যাম্পেন লেক বলা হয়। নিউজিল্যান্ডের এর Wai-O-Tapu তে অবস্থিত। Wai-O-Tapu জায়গাটি আবার রুটুরুয়া তে অবস্থিত। মাউরি ভাষা থেকে অনুবাদ করলে জানা যায় Wai-O-Tapu এর অর্থ হচ্ছে পবিত্র পানি অথবা রঙিন পানি আর রুটুরুয়া শব্দের অর্থ হচ্ছে কাহুমাতামমিও, যে ছিল লর্ড মারিওর চাচা যিনি এই অঞ্চলটি আবিষ্কার করেছেন। পুরো রুটুরুরা অঞ্চলটিই তিব্র ভাবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি,পানি ও বাষ্প ও আরো বহু অদ্ভুত প্রাকৃতিক বৈশিষ্টে গঠিত ও পরিপূর্ণ।

# বিয়ার লেক আরোরা: শ্যাম্পেনের পরই আসছে বিয়ার লেক অরোরা। এই লেকটি  আলাস্কায় অবস্থিত। আর আরোরা বলতে বুঝায় বিয়ার লেকএর আকাশের মনরোম রঙ্গিন আলোর খেলা। এটাকে উত্তরের আলো বা (Northan Light)ও বলা হয়। বিয়ার লেক আরোরা প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টি। আকাশের এই রঙ্গিন খেলাকে নিয়ে রয়েছে অনেক লোককথা। এর ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। প্রাচীণ লোককথা থেকে জানা যায়, এই আনিন্দ্য সুন্দর আলোর ঝলকানি সৃষ্টি করেছিলো রোমাস্ন সুর্যদয়ের দেবতা আরোরা (Aurora)। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেযে সুর্যবায়ু সাথে যখন পৃথিবীর চোম্বকক্ষেত্রের সংঘর্ষ ঘটে তখনি এই রহস্যময় আলোর উৎপত্তি হয়।

# নরকের দরজা: ভয়ংকর এই স্থানটি তুর্কমেনিস্তানের কারা-কুর মরুভূমির দারভাযা গ্রামের পাশে অবস্থিত। ১৯৭১ সালের তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি কোম্পানি গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য খনন কাজ চালায়। তখনই ঘটে এক বিশাল বিস্ফোরণ। বন্ধ হয়ে যায় গ্যাসক্ষেত্রটি। মারা যায় অনেক লোক। আর সৃষ্টি হয় বিশাল আগুনে ভরা বড় বড় গর্ত। আর এই বিশাল গর্ত থেকে ক্রমাগত নির্গত হচ্ছে মিথেন গ্যাস আর তার থেকে আগুন। এই আগুনের তাপ এত বেশি যে তার পাশে ২ মিনিটের বেশি দাঁড়ানো সম্ভব নয় কিছুতেই। আর এরপর থেকেই স্থানটির নাম ‘নরকের দরজা’।

# রেসট্রাক প্লায়া: আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু উপত্যকায় অবস্থিত এই স্থানটি আমেরিকানদের কাছেই এক রহস্য। এই স্থানটির সবচেয়ে রহস্যময় বিষয় হলো এর বুকে ভেসে বেড়ানো পাথরগুলো। কিভাবে এই পাথরগুলো ভেসে ভেসে এসেছে তার কোনো কুলকিনারা কেউ করতে পারেনি। এই ভেসে বেড়ানোর কারন হিসাবে বলা হচ্ছে বায়ু প্রবাহ। শীতকালে যখন এই মরুভুমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় তখন racetrack playa প্রচুর পিচ্ছিল হয়ে যায়। তখন প্রবল বায়ু প্রবাহের ফলে পাথর গুলো এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করে।

# ওয়াদী জ্বীন: ২০০৯-২০১০ সালের দিকে সৌদি সরকার এই ওয়াদি জ্বীন নামক স্থান দিয়ে একটি রোড বানানোর পরিকল্পনা করে। কিন্তু কাজ ত্রিশ কিলোমিটার পর্যন্ত করার পর সমস্যা শুরু হয়। হঠাৎ দেখা যায় কাজ করার যন্ত্রপাতি আস্তে আস্তে মদিনা শহরের দিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাচ্ছে। যেন কেউ যন্ত্রপাতিগুলো মদিনার দিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু কে পাঠাচ্ছে কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। পিচ ঢালাই করার জন্য বড় বড় রোলার গাড়িগুলো বন্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে উপর দিকে উঠতে থাকে এবং মদিনা শহরের দিকে নিজে নিজে চলতে শুরু করেছে। শোনা যায় এমন কি পেপসির বোতল পানির বোতল এবং যে পানি রাস্তায় ফেলানো ছিল সেগুলোও নিচের দিকে না গিয়ে উপরে মদিনার দিকে যাওয়া শুরু করে দিয়েছে। এই সব দেখে কর্মরত শ্রমিকরা ভয় পেয়ে যায়। তারা কাজ করতে অস্বীকার করে। রাস্তাটির কাজ যেখানে বন্ধ করা হয় সেখানে চারিদিকে বিশাল বিশাল কালো কালো পাহাড়। ওখানেই শেষ মাথায় গোল চক্করের মতন করে আবার সেই রাস্তা দিয়েই মদিনা শহরে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সৌদি নাগরিকরা সহজে কেউ এই স্থানটিতে যেতে চায় না। ওয়াদি জ্বীন জায়গাটির অবস্থান মদিনার আল বায়দা উপত্যকায়। উপত্যকাটি মসজিদে নববীর উত্তর পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলো মিটার দূরে অবস্থিত।

# শ্বেত মরুভূমি: মিশরের ফারাফ্রা মরুদ্যানের ৪৫ কিলোমিটার উত্তরে এই শ্বেত মরুভূমিটি অবস্থিত। মরুভূমিটিকে দেখে অবাস্তব মনে হলেও এটিই বাস্তব। অনেক বছর আগে সাহারা মরুভূমি পানির নিচে ডুবে ছিল। সে সময় সাহারা মরুভূমির একটি অংশে খড়িমাটি জমতে থাকে। খড়িমাটি জমতে জমতে এক সময় এই অংশটুকু পানির উপরে ভেসে ওঠে। জমে থাকা এই খড়িমাটি থেকেই এই শ্বেত মরুভূমির সৃষ্টি।

# স্নেক আইল্যান্ড: ব্রাজিলের স্নেক আয়ারল্যান্ড। চার লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে বছরের পর বছর ধরে রাজত্ব করে চলেছে গোল্ডেন ল্যান্সহেড নামের ভয়ংকর বিষধর এক প্রজাতির সাপ। স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, দ্বীপটির প্রতি বর্গমিটার এলাকায় পাঁচটি করে সাপের দেখা মেলে। ব্রাজিলের নৌবাহিনী এ দ্বীপটিতে সাধারণের চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

Author


Discover more from MIssion 90 News

Subscribe to get the latest posts sent to your email.

সম্পর্কিত সংবাদ

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এছাড়াও পরীক্ষা করুন
Close
Back to top button

Adblock Detected

Please consider supporting us by disabling your ad blocker